নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ডে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় যুবদল, ছাত্রদল নেতারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। মূলত চাদাবাজির কারণে এ নির্মম হত্যাকান্ড ঘটেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ-বাকরুদ্ধ পুরোদেশ। তোলপাড় চলছে সর্বত্র। প্রকাশ্যে এমন নারকীয় ঘটনার দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত মানুষ। ঘটনার ভিডিও প্রকাশের পর এ নিয়ে তোলপাড় হলেও তার আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো ভূমিকা না থাকাকেও রহস্যজনক মনে করা হচ্ছে। অনেকে প্রশ্ন করছেন, দুদিন কি করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া কারা ঘটনার ভিডিও ছড়িয়েছেসেটিও এখনও অজানা। শুক্রবার রাতে ঘটনার খবর ও ভিডিও ব্যাপক আকারে প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ইতোমধ্যেই পুলিশ ও র্যাবের তৎপরতায় আসামীদের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই আসামী মহিন ও তারেককে আগেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে র্যাব মামলার আরও ২ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পাঁচজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবারের ওই ঘটনা নিয়ে প্রথমে কোনো আলোচনা না থাকলেও ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় উঠে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামী মাহিন ও তারেক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। ওই ব্যাবসায়ে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাকান্ডটি ঘটেছে।, মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে চাঁদা না দেওয়ায় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথরের আঘাতে হত্যা মামলার ২ আসামিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ইবনে সিনা হাসপাতাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ দেখে দেখে আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
পুরান ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে গেল বুধবার সন্ধ্যায় নিহত সোহাগের প্রায় বস্ত্রহীন রক্তাক্ত দেহ ফটকের ভেতর থেকে টেনে বের করতে দেখা যায় দুই যুবককে। এর মধ্যে একজন তার গালে চড় মারছে, আরেকজন এসে ওই ব্যক্তির বুকের ওপর লাফাচ্ছিলো। কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে একই কাজ করছে। কেউ এসে তাঁর মাথায় লাথি মারছিলো। এক পর্যায়ে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরেই পিটিয়ে ও ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তারপর মরদেহের ওপর চলে বর্বরতা। এ ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে। সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে কম্পাউন্ডে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এরপর নিথর দেহ টেনেহিঁচড়ে কম্পাউন্ডের বাইরের সড়কে এনে শত শত মানুষের সামনে চলে উন্মত্ততা।
স্থানীয়রা বলছেন, ওই হত্যাকাণ্ডে যাদের অংশ নিতে দেখা গেছে, এবং নেপথ্যে যাদের নাম আসছে, তারা সবাই পূর্ব পরিচিত। একসময় তাদের কয়েকজন সোহাগের ব্যবসার সহযোগী ছিলেন। ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধে এমন ভয়ঙ্করভাবে কাউকে হত্যা করা হতে পারে, তা পরিচিতজনদের ধারনার বাহিরে।
পুরনো তারের ব্যবসার একটি বড় সিন্ডিকেট সেখানে রয়েছে, যার নিয়ন্ত্রণ করতেন সোহাগ। গ্রেপ্তার মহিন তার দলবল নিয়ে ওই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই চেষ্টায় তারা সোহাগের গোডাউনে তালা মেরে দেয়। তাদের মধ্যে এটা নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়। জড়িতদের কয়েকজন স্থানীয় যুবদলের রাজনীতিতে জড়িত। সোহাগও এক সময় যুবদল করতেন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার ১৯ আসামির মধ্যে দুজন যুবদলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরে নেতা।
যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের পাঁচজন বহিষ্কার: ঘটনার ভিডিও ফুটেজে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের যাঁদের দেখা গেছে, তাদের এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাদের সংগঠন থেকেও আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল পুরান ঢাকার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে। তারা হলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী (পিন্টু) ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম (লাকি), চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস, মাহমুদুল হাসান মাহিন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু।
জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব সংগঠন নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত নেতা অপু দাসের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।এছাড়া মাহমুদুল হাসান মাহিন ২০১৮ সালের পূর্বে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে কোন কার্যক্রমে জড়িত নেই। মাহিনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
