নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্বদ্যিালয়ে ছাত্রদলের হল শাখা কমিটিগুলোতে ছাত্রলীগ ও হত্যা মামলার আসামীরা স্থান পেয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কমিটিতে নিষিদ্ধ গোষিত ছাত্রলীগের নেতারা কমিটিতে পদ পেয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে তিন জন রয়েছে হত্যা মামলার আসামী। এসব পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে বেঈমানী করে ছাত্রদল হল কমিটি ঘোষনা করেছে। পাশাপাশি এসব কমিটিতে ছাত্রলীগের নেতাদের পদ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের ১৮টি হলের কমিটিতে ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগের নেতারা চাত্রদলের কমিটিতে পদও পেয়েছেন। রোকেয়া হলের ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন বর্তমান হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোছা. শ্রাবণী আক্তার। একই হলের সদস্য সচিব আনিকা বিনতে আশরাফের সঙ্গে ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ আছে। বুয়েটের বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বীর সঙ্গে তার ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কুয়েত মৈত্রী হলের সদস্য সচিব পদধারী জান্নাতুল ফেরদৌস পুতুল ছাত্রলীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ছাত্রলীগের আমলে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে নেচেছিলেন এই নেত্রী। একইভাবে ছাত্রলীগের সঞ্জীব-সাদ্দাম কমিটিতে উপ গণযোগাযোগ সম্পাদক পদে ছিলেন শামসুন্নাহার হলের বর্তমান ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নিতু রানী সাহা।
ছাত্রলীগের সবচেয়ে বেশি নির্যাতনকারীরাও কমিটির তালিকায় উঠে এসেছে। বিজয় ৭১ হলের ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাকিবুল হাসান রাকিবের ব্যাপারে একাধিক জুনিয়র ও সিনিয়রদের মন্তব্য তিনি ছিলেন সবচেয়ে উগ্র ও ছাত্রলীগের বিশ্বস্ত। জিয়াউর রহমান হলে পদ পেয়েছেন রাজু শেখ নামে এক ছাত্রদল নেতা তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট। এ ছাড়াও অমর একুশে হলে ছাত্রলীগের নিয়মিত প্রোগ্রামে অংশ নেয়া আব্দুল হামিদ তিনি এখন ছাত্রদলের হল সদস্য সচিব।
এরই প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সংগঠনটি। সংগঠনটির ঢাবি শাখার দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কমিটিতে পদ পেয়েছেন হত্যা মামলার আসামি এবং ছাত্রলীগ কর্মীরাও। এ ছাড়া ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত না থেকেও পদ পেয়েছেন কেউ কেউ।
নবগঠিত বর্ধিত কমিটি ও ১৭টি হলের কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার আসামি (বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কৃত) হামিদুল্লাহ সালমান, রাজু আহমেদ ও মোহাম্মদ রাজন মিয়া ছাত্রদলে পদ পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে হামিদুল্লাহ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রদলের সভাপতি, রাজু শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং রাজন সদস্যপদ পেয়েছেন।
নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এমন কয়েকজন ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রোকেয়া হলে সভাপতি পদ পেয়েছেন কাজী মৌসুমী আফরোজ। তিনি শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে তাঁকে। ২১ নম্বর ছাত্র হলে সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া ফিরোজ আহমেদ এবং একই হলের সহসভাপতি সাইদুর রহমানও ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।
১০ নম্বর হল ছাত্রদলের সভাপতি সাইফ বিন মাহবুব, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাকিব মাওলা, বর্ধিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া মো. শাকুর বাপ্পী, বর্ধিত কমিটির সদস্য শুভজিৎ বিশ্বাস, শাবাব সবুজ অর্ণব, ইমরান আজিজ—তাঁদের সবাইকে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের মিছিল-সমাবেশে দেখা গেছে। তবে তাঁরা ছাত্রলীগের কোনো পদে ছিলেন না। এ ছাড়া শহীদ সালাম-বরকত হল ছাত্রদলের সভাপতির পদ পাওয়া সাইদুল ইসলাম ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের বিগত কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।
আ ফ ম কামালউদ্দিন হল ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির দায়িত্ব পাওয়া খাইরুল ইসলাম (নাহিদ) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। শাখা ছাত্রদলের বর্ধিত কমিটির সদস্য হয়েছেন আল আমিন, ইমন মোল্লা, তানভিরুল আরেফিন কবির পাপন। তাঁদের ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া তাঁরা হলে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক ব্লকের কক্ষে থাকতেন।
নবগঠিত হল কমিটির অন্তত তিন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকার পরও কমিটিতে তাঁদের পদ দেওয়া হয়েছে। ওই তিনজন হলেন বীর প্রতীক তারামন বিবি হলের যুগ্ম সম্পাদক নোসিস মোকাররমা তেরেসা, রিফা নানজীবা হিয়া এবং নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক উম্মে হাবিবা।
