২০২৪ সালে বিশেষ ছাড়ে নবায়ন হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ
নিজস্ব প্রতিবেদন
বিশেষ সুবিধায় নবায়ন করা ঋণ পুনরায় খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে নবায়ন করেও খেলাপি ঋণের উর্ধ্বগতি কমানো যাচ্ছে না। গত বছরে ব্যাংক খাতে ৮৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিশেষ সুবিধা নিয়ে খেলাপিরা নবায়ন করেছেন। ওই বছর পর্যন্ত নবায়ন করা ঋণের স্থিতি দাড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পুনরায় ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়েছে। নবায়ন করা ঋণ পুনরায় খেলাপি হওয়ার ক্ষেত্রে এটিই সর্বোচ্চ।
সোমবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতি বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। ২০২৪ সালের ব্যাংক খাতের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ওইসব তথ্যের আলোকেই এ খাতের ঝুকিগুলো নিরুপণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত বছর ব্যাংক খাতে মোট ৮৬ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এ ঋণসহ নবায়ন করা মোট ঋণের স্থিতি গত বছর শেষে দাড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছর পর্যন্ত পুনরায় খেলাপি হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ। যে কারণে বিশেষ ছাড়ে নবায়ন করেই খেলাপি ঋণ কমানো যাচ্ছে না। বাকি ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার নবায়ন করা ঋণ এখনও নিয়মিত হিসাবে রয়ে গেছে। অর্থাৎ নবায়ন করা ঋণের মধ্যে পুনরায় খেলাপি হয়েছে ৩৮ দশমকি ৪২ শতাংশ ঋণ। নিয়মিত হিসাবে রয়েছে ৬১ দশমকি ৫৮ শতাংশ ঋণ।
নবায়ন করা ঋণের মধ্যে গত বছরেই সবচেয়ে বেশি খেলাপি হয়েছে। ২০২৩ সালে এ ঋণের স্তিতি ছিল ৫৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। সে হিসাবে অর্ধেকের বেশি নবায়ন করা ঋণ গত বছওে খেলাপি হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ব্যাংক খাতে লুটপাটের চিত্র প্রকাশ হচ্ছে। ওই সময়ে রাজনৈতিকভাবে প্রবাশালীদের ঋণ বিশেষ ছাড়ে নবায়ন করা হয়েছিল্ সেগুলোর কিস্তি পরিমোধ না করলেও ব্যাংক তা খেলাপি করেনি। নিয়মিত হিসাবেই রেখে দিয়েছিল্ সরকার পতনের পর তা খেলাপি করা হয়েছে। যে কারণে নবায়ন করা ঋণ গত বছর বেশি খেলাপি হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে বিশেষ চাড়ে খেলাপি ঋণ নবায়নের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। ২০২০ সালে নবায়ন করা ঋণেল পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। ২০২১ সালে নবায়ন করা হয়েছে ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে নবায়ন করা হয়েছে ৬৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ ৯১ হাজার ২২১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয় বিশেষ ছাড়ে। গত বছর তা কিছুটা কমে যায়। তারপরও ৮৫ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সীমিত কিছু বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়েও খেলাপি ঋণ নবায়নের পরিমাণ বেড়েছে। তবে আগের মতো গণ ছাড় পায়নি এবার ঋণ খেলাপিরা। ঋণ খেলাপিরা সাধারন ডিসেম্বরের আগে খেলাপি ঋণ নবায়ন করে। কারণ খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোর যেমন চাপ থাকে, তেমনি ডিসেম্বরের পর খেলাপি থাকলে তার দুর্নাম বেশি হয়। কারণ তখন আগের পুরো বছর জুড়েই খেলাপি ছিল বলে ধরা হয়।
ডবশেষ চাড়ে ২০২০ সালে মোট নবায়ন করা ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ওই বছরেই পুনরায় খেলাপি হয়েছিল ২৯ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ ২৫ হাজার ৫০১ কোটি টাকা ছিল নিয়মিত্ নবায়ন করা মোট ঋণের মধ্যে ৮০ দশশকি ৭৭ শতাংশ ছিল নিয়মিত। খেলাপি হয়েছিল ১৯ দশমকি ২৩ শতাংশ। ২০২১ সালে মোট নবায়ন করা ঋণের স্থিতি বেড়ে দাড়িয়েছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিয়মিত ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। পুনরায় খেলাপি হয়েছিল ৩২ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। মোট নবায়ন করা ঋণের মধ্যে ৮০ দশমকি ৪৩ শতাংশ ছিল নিয়মিত। খেলাপি হয়েছিল ১৯ দশমকি ৫৭ শতাংশ।
২০২২ সালে নবায়ন করা ঋণের স্তিতি ছিল ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে নিয়মিত ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। পুনরায় খেলাপি হয়েছিল ৪১ হাজার কোটি টাকা। মোট নবায়ন করা ঋণের মধ্যে ৮০ দশমকি ৯০ শতাংশ ছিল নিয়মিত। খেলাপি হয়েছিল ১৯ দশমকি ২০ শতাংশ।
২০২৩ সালে মোট নবায়ন করা ঋণের স্তিতি ছিল ২ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে নিয়মিত ছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা এবং ফের খেলাপি হয়েছিল ৫৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। মোট নবায়ন করা ঋণের ৮১ দশমিক ২৬ শতাংশ নিয়মিত ছিল এবং খেলাপি হয়েছিল ১৮ দশমকি ৭৪ শতাংশ।
কিন্তুু ২০২৪ সালে খেলাপি ঋণের স্তিতি যেমন বেড়েছে, তেমনি নবায়ন করা ঋণ পুনরায় খেলাপি হয়েছে বেশি মাত্রায়।
নবায়ন করা ঋণ খেলাপি সবচেয়ে বেশি হয়েছে শিল্প খাতে। পাশাপাশি বড় অংকের ঋণই বেশি মাত্রায় নবায়ন করা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের প্রবনতা বেড়েছে। যে কারণে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। মূলধন গাটতি সর্বনিম্ম পর্যায়ে নেমে গেছে। এতে ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। খেলাপি ঋণের অর্ধেকেরও বেশি রয়েছে শীর্ষ ৫টি ব্যাংকে।
