নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচনের আগে সংস্কার, বিচার ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা বলেছে, সংস্কারকে দৃশ্যমান ও সংস্কার বাস্তবায়ন করা এ সরকারের কর্তব্য। জুলাই আন্দোলনের গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। এক্ষেত্রে তেমন কোন অগ্রগতি নেই। একইসঙ্গে মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু এসব বিষয় নিশ্চিত না করেই নির্বাচন আয়োজনের ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। জুলাই সনদ ঘোষনাকে স্বাগত জানিয়ে এনসিপি বলেছে, এতে অনেক কিছুই বাদ পড়ে গেছে। সেগুলো থাকলে ভাল হতো।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বুধবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র ও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আখতার হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার উপস্থাপন করা জুলাই ঘোষণাপত্র ‘পরিপূর্ণ’ হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই শহীদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করতে ‘ব্যর্থ’ হয়েছে। জুলাই ঘোষণাপত্রে জুলাইয়ের শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে; জুলাইয়ের আন্দোলনকারী, শহীদ পরিবার ও আহতদের আইনি সুরক্ষা দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে আবারো প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, ফ্যাসিবাদমুক্ত রাষ্ট্রকাঠামো আমরা পাবো।
এনসিপির এই নেতা বলেন, একইসঙ্গে, এই ঘোষণাপত্রের আরও পরিপূর্ণতার জন্য আমরা দীর্ঘ সময় ধরে সরকারের কাছে যে দাবিগুলো জানিয়ে এসেছিলাম, তার কিছু বিষয় অনুপস্থিত রয়ে গেছে।
জুলাই ঘোষণাপত্রে এই ভূখণ্ডের ’৪৭-এর আন্দোলন উল্লেখ নেই। এই ঘোষণাপত্রে শহীদদের সংখ্যার ব্যাপারে ‘প্রায় এক হাজার’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ জাতিসংঘের প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে এক হাজার ৪০০ জনের কথা। গত এক বছরে সরকার শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা গণহত্যা, বিচারিক হত্যাকাণ্ড, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আবরার ফাহাদের ভারতের আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলন, মোদিবিরোধী আন্দোলনের কথা ঘোষণাপত্রে উল্লেখ থাকলে ঘোষণাপত্র পরিপূর্ণ হতে পারতো বলে মনে করে এনসিপি।
আখতার বলেন, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এই ঘোষণাপত্রের ২৫ ও ২৭ অনুচ্ছেদে, নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানে তফসিলে এই ঘোষণাপত্রকে উল্লেখ করার কথা বলা হয়েছে। আমরা এনসিপি দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে একটি নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়ে আসছি। সে লক্ষ্যে গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নতুন সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি আমরা সরকারের কাছে করে এসেছি।
তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়বস্তুতে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেখানে বাস্তবায়নের পথ কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। যখন এই ঘোষণাপত্রকে পরবর্তী সংস্কারকৃত সংবিধানের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়, তখন আমাদের যে নতুন সংবিধানের দাবি, তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি পুনরায় দাবি করে বলেন, বাংলাদেশে যে নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছে, তাদের অভিপ্রায়কে ধারণ করতে যেন নতুন সংবিধান তৈরি করা হয় এবং সেখানে জুলাই ঘোষণাপত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এনসিপি সদস্য সচিব বলেন, জুলাই সনদে যে সংস্কারগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে এবং কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেসব সংস্কার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কাল থেকেই বাস্তবায়ন করতে হবে। জুলাই সনদকে কার্যকর করে, তার ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। নির্বাচনের ঘোষনার বিষয়ে আমাদের আপত্তির কোনো জায়গা নেই। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের পূর্বে সরকারের অবশ্য পালনীয় কিছু কর্তব্যের জায়গা রয়েছে। গণহত্যাকারীদের বিচার ও রাষ্ট্র কাঠামোর গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার নিয়ে এই সরকার যাত্রা শুরু হয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে সংস্কারকে দৃশ্যমান করা ও সংস্কার বাস্তবায়ন করা এ সরকারের অবশ্য কর্তব্য। একইসঙ্গে নির্বাচনের আগেই মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
তিনি সরকারের কাছে প্রতিশ্রুতি চান যে, নির্বাচনের আগেই সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান করা হবে, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে বলেও উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন, আরিফুল ইসলাম আদীবসহ কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
