নিজস্ব প্রতিবেদক
আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে নিয়ে গেছেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যিনি একক প্রতিভায় বাংলা সাহিত্যকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদার আসনে। বাঙালির হৃদয়ানুভূতি ও অভিব্যক্তির সার্থক প্রকাশ ঘটেছে তার অসামান্য রচনায়। তার বৈচিত্র্যময় রচনাসম্ভার মানবিক আবেদনের মহিমায় হয়ে উঠেছে কালজয়ী। কবিতা, সংগীত, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনিসহ শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি শাখা রবির প্রতিভার স্পর্শে দীপ্তিমান হয়ে উঠেছিল। এমনকি জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি গভীর আগ্রহে চিত্রকলার চর্চাও শুরু করেন। সেসব কাজের দাহ আর দীপ্তি ভারতীয় উপমহাদেশের চিত্রকলায় ভিন্ন মাত্রা সংযোজন করেছে। বহুমুখী প্রতিভার আলোয় যেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে উদ্ভাসিত করেছিলেন রবির কিরণের মতোই।
আজ ২২ শ্রাবন, ৬ আগস্ট কবি গুরুর প্রয়ান দিবস। তার ৮৪তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে নাান কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়েছে।
১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে এই বর্ষা ঋতুতেই চিরবিদায় নেন কবি। ৮০ বছর বয়সে চলে গেলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ মৃত্যু দেহান্তর মাত্র। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনেক কিছুরই প্রথম রূপকার তিনি। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য নতুন যুগের সৃষ্টি হয়। বাংলা গদ্যের আধুনিকায়নের পথিকৃৎ রবিঠাকুর ছোটগল্পেরও জনক। গল্পে, উপন্যাসে, কবিতায়, প্রবন্ধে, নতুন নতুন সুরে ও বিচিত্র গানের বাণীতে, দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ প্রবন্ধে, এমনকি চিত্রকলায়ও রবীন্দ্রনাথ চির নবীন, চির অমর।
বাংলা সাহিত্যকে তিনি বিশ্বের দরবারে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি প্রথম এশীয় হিসেবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। দেশজ শিক্ষাব্যবস্থা বিকাশের লক্ষ্যে তিনি গড়ে তোলেন শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি একজন সমাজসংস্কারকও ছিলেন। বাংলাদেশেও তিনি অনেক কাজ করেছেন। তার জীবনের অনেক সাহিত্য বাংলাদেশে বসে রচনা করেছেন।
বাইশে শ্রাবণ উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবসে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানটে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজনটি সবার জন্য উন্মুক্ত। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সঙ্গীত, নৃত্য, গীতি আলেখ্যসহ নানা আয়োজন থাকছে।
বাংলা একাডেমির আয়োজনে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে হবে অনুষ্ঠানটি। এতে মূল বক্তা থাকবেন গবেষক ও সমালোচক অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনা করবেন কবি ও লেখক ড. মাহবুব হাসান, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান হাবিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম ও বাংলা একাডেমির সচিব মো. সেলিম রেজা। বিকেল ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকছে আবৃত্তি ও রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনা।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীও নানা আয়োজন করেছে। এতে আলোচনা সভা ও সঙ্গীত নৃত্য থাকবে।
চ্যানেল আইয়ের আয়োজনে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হবে সরাসরি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে থাকবে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা, গান, কবিতা, টেলিফিল্মসহ দিনভর নানা আয়োজন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে দুরন্ত টেলিভিশনে প্রচার হবে বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান ‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে’। অমিত চৌধুরীর পরিচালনায় এতে নৃত্য পরিবেশন করবেন নৃত্য সংগঠন ‘সাধনা’র শিল্পী রুদমিলা প্রিয়ন্তী চৌধুরী, আরিশা চৌধুরী, নোহলী ইসলাম রিয়া, লাবণ্য দাশ গুপ্তা, মাহিনুর মাহজাবিন রূপ, আনুভা চৌধুরী, মধুরিমা রায়। পার্থ প্রতিম হালদার পরিচালিত নৃত্যানুষ্ঠানটি প্রচারিত হবে ৬ই আগস্ট সকাল ৮টায়।
