নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১৮টি হলে ছাত্রদলের কমিটি প্রকাশ করার পর শক্রবার মধ্যরাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাবির সবকটি হল থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা টিএসসিতে জড়ো হয়েছেন। এর মধ্যে রোকেয়া হল থেকে ছাত্রীরা সবার আগে মিছিল নিয়ে টিএসসিতে জড়ো হন। এরপর শামসুন নাহার হলের ছাত্রীরা আসেন। এরপর থেকে অন্য সব হলগুলোর শিক্ষার্থীরা মিছিল টিএসসিতে জড়ো হতে থাকেন।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৮টি হলে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে। ছাত্রদলের ৫৯৩ জন শিক্ষার্থী এই হল কমিটিগুলোতে পদ পেয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে অবমূল্যায়িত হয়েছেন অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীও। এসব অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সংগঠনটি।
এদিকে ছাত্রদলের এই কমিটি ঘোষনাকে কোন ক্রমেই মানতে পারছে না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর আগে আওয়ামী লীগের সময়ে তাদের ছাত্র সংগঠণ ছাত্রলীগের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অত্যাচারে অনেক শিক্ষার্থীর প্রাণ জড়েছে। জুলাই আন্দোলনের সময়ও ক্যাপাসে ছাত্র রাজনীতির নিষিদ্ধের দাবি তুঙ্গে ওঠেছিল। সেই দাবির প্রতি কোন রকম সম্মান প্রদর্শন না করে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ১৮টি হলে কমিটি গঠণ করেছে। এর মাধ্যমে তারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি সচল করছে। ফলে আগামীতে আবার ছাত্রলীগের পুনরাবৃত্তির ঘটনাই ঘটবে। যা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চায় না।
এ সময় তারা ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, হল পলিটিক্স নো মোর,’ ‘লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি, চলবে না চলবে না,’ ‘ছাত্রদলের রাজনীতি, চলবে না চলবে না,’ ‘ছোট টিমের রাজনীতি, চলবে না চলবে না’সহ নানা স্লোগান দেন।
শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে ঢাবির টিএসসিতে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। এদিন সন্ধ্যা থেকেই ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে সরব থাকতে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের। পরে প্রায় সব হলের শিক্ষার্থীরা এই মিছিলে অংশ নেন।
এর আগে, রোকেয়া হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও চার দাবিতে হল প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে রোকেয়া হলের একদল শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে ছাত্রদল আজকে তাদের হল কমিটি প্রকাশ করেছে। যেখানে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই প্রতিটি হলের ছাত্রছাত্রীরা সম্মিলিতভাবে হলের ভিতর রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা করেছিল, সেখানে ছাত্রদল কিভাবে কমিটি দেওয়ার এত সাহস কোথায় পায়।’
জুলাই আন্দোলনের মতোই হল থেকে রাস্তায় নেমে এসেছেন ছাত্রীরা। এ সময় বিভিন্ন হল থেকে ছোট মিছিল নিয়ে এসে টিএসসিতে একত্র হন ছাত্ররাও। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা ভিসি চত্বরের দিকে যান।
এদিকে, ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে একাধিক পদধারীর বিরুদ্ধে- রোকেয়া হলের ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন বর্তমান হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোছা. শ্রাবণী আক্তার। একই হলের সদস্য সচিব আনিকা বিনতে আশরাফের সঙ্গে ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ আছে। বুয়েটের বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বীর সঙ্গে তার ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কুয়েত মৈত্রী হলের সদস্য সচিব পদধারী জান্নাতুল ফেরদৌস পুতুল ছাত্রলীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ছাত্রলীগের আমলে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে নেচেছিলেন এই নেত্রী। একইভাবে ছাত্রলীগের সঞ্জীব-সাদ্দাম কমিটিতে উপ গণযোগাযোগ সম্পাদক পদে ছিলেন শামসুন্নাহার হলের বর্তমান ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নিতু রানী সাহা।
ছাত্রলীগের সবচেয়ে বেশি নির্যাতনকারীরাও কমিটির তালিকায় উঠে এসেছে। বিজয় ৭১ হলের ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাকিবুল হাসান রাকিবের ব্যাপারে একাধিক জুনিয়র ও সিনিয়রদের মন্তব্য তিনি ছিলেন সবচেয়ে উগ্র ও ছাত্রলীগের বিশ্বস্ত। জিয়াউর রহমান হলে পদ পেয়েছেন রাজু শেখ নামে এক ছাত্রদল নেতা তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট। এ ছাড়াও অমর একুশে হলে ছাত্রলীগের নিয়মিত প্রোগ্রামে অংশ নেয়া আব্দুল হামিদ তিনি এখন ছাত্রদলের হল সদস্য সচিব।
এদিকে, ছাত্রদল ঢাবি শাখা ১৮টি হলে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পরপরই অনেকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে। এরই প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সংগঠনটি। সংগঠনটির ঢাবি শাখার দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে লিখিত প্রতিবেদন পেশ করার নির্দেশনা দেন।
