জব্দে চিঠি চালাচালি
।নিজস্ব প্রতিবেদক
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভ’মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তার স্বার্থ সংশ্লিস্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব সম্পদ জব্দ করতে যুক্তরাষ্ট্রের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষ ও ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বাংলাদেশ সরকার। জাভেদের সম্পদ জব্দ করতে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশ একটি মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এসিস্টেন্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে। এতে তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। ফিরতি চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু বিষয়ে জানতে চেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ইতিমধ্যে কিছু তথ্য জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাঠানো তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে দেখছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের মধ্যে বেশ কিছু সময় ভ’মিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌদুরী জাভেদ। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে টিআইবি এক সংবাদ সম্মেলনে কারো নাম উল্লেখ না করে বিদেশে সরকারের একজন মন্ত্রীর বিপুল সম্পদ রয়েছে বলে জানায়। পরবর্তীতে তিনি যে ভ’মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধূরী তা প্রকাশ হয়ে পড়ে। ওই নির্বাচনের পর তিনি আর মন্ত্রীত্ব পাননি। তবে তিনি সপরিবারে দেশত্যাগ করে যুক্তরাজ্যে চলে যান। যেখানে তার বড় ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য ও সম্পদ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে বেশ কিছু সম্পদ ইতিমধ্যে জব্দ করা হয়েছে। দেশটিতে তার স্বার্থ সংশ্লিস্ট ব্যক্তির নামে আরও কিছু সম্পদ রয়েছে। সেগুলোও জব্দ করার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
সরকারি একাধিক সংস্থার প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ভ’মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তার স্বার্থ সংশ্লিস্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ৭টি বিলাস বহুল বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিস্ট সরকারির দপ্তরের নথি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সাবেক ভ’মিমন্ত্রীর সম্পদ বলে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব সম্পদ শনাক্ত করতে চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা নেয় বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশের বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ), দুনর্িিত দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি বিভাগ। এর মধ্যে সরকারের একটি সংস্থার কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সাবেক ভ’মিমন্ত্রীর তা স্বার্থ সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা সম্পদের ছবি তুলে নিয়ে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দপ্তরের নথির তথ্য ও ছবিসহ সুনির্দিষ্টভাবে দেশটির কাছে বাংলাদেশের তদন্ত সংস্তাগুলো তুলে ধরে। তারা এটিও তুলে ধরে যে, যুক্তরাষ্ট্রে এসব সম্পদ অর্জন করতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে কোন অর্থ আনেনি। তিনি বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ মানি লন্ডারিংয়ের প্রক্রিয়ায় পাচার করে এনে যুক্তরাষ্ট্রে এসব সম্পদ গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশের আরকর বিভাগে সাবেক মন্ত্রীর ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানিক কোন নথিতেই যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ থাকার কথা উল্লেখ নেই। তার মানে তিনি কর ফাকি দিয়ে ওইসব সম্পদ গড়তে প্রয়োজনীয় অর্থ বাংলাদেশে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এনেছেন।
এছাড়াও ব্যাংক খাতে জালিয়াতির বিষয়ে বিএফআইইউর তদন্ত প্রতিবেদন, বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনের অনুলিপি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি একটি তদন্ত সংস্থা থেকে কিছু ডকুমেন্ট বাংলায় লিখিত প্রতিবেদনই পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ বাংলায় পাঠানো প্রতিবেদনের সারমর্ম বুঝতে না পেরে আবার বাংলাদেশের ওই তদন্ত সংস্থার কাছে চিঠি দেওয়া দেয়, যেসব ডকুমেন্ট বাংলায় পাঠানো হয়েছে, সেগুলোর ইংরেজি ভার্সন পাঠানোর জন্য। ইতিমধ্যে সংস্থাটি ওইসব ডকুমেন্টের ইংরেজি ভার্সন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে তারা বাংলায় ডকুমেন্ট পাঠানোর জন্য ভুল স্বীকার করে এবং দু:খ প্রকাশ করে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিস্ট একাধিক দপ্তর বাংলাদেশের পাঠানো তথ্য উপাত্তগুলো পর্যালোচনা করছে। এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে তথ্যের আদান প্রদান হচ্ছে। এখন বাংলাদেশকে প্রমাণ করতে হচ্ছে, ওই অর্থ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বা তৃতীয় কোন দেশ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেছে। তৃতীয় কোন দেশ থেকে থেকে গেলে সেটি অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধ নয়। তবে বাংলাদেশ থেকে কর ফাকি দিয়ে গেলে বা অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হলে সেটি অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের আইনে অপরাধ। বাংলাদেশ থেকে যেসব অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হয়েছে সেগুলো যে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সেটিও প্রমাণ করতে হবে।
সাবেক ভ’মিমন্ত্রীর প্রতারনা, জালিয়াতি ও অন্যান্য অপরাধমূলক অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরও দুটি মামলা দায়ের করার বিসয়টি প্রক্রিয়াদীন রয়েছে। ইতিমধ্যে আদালতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া সমুদয় সম্পদ জব্দ করার জন্য আদেশ পাওয়া গেছে। এই আদেশের কপি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও স্বার্থ সংশ্লিস্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ৭টি বিলাসবহুল বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো কেনার সময় দলিলে মূল্য উল্লেখ করেছেন ৭৫ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য ৯২ কোটি টাকা। বর্তমানে বাজার মূল্য হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংকের হিসাবে ২ লাখ ডলারের বা স্থানীয় মুদ্রায় আড়াই কোটি টাকার স্তিতি পাওয়া গেছে। এছাড়াও বেনামে যুক্তরাষ্ট্রে তার আরও সম্পদ রয়েছে। যেগুলোর বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত যেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে তার সবগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিস্ট সরকারের দপ্তরের নথি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। এর বাইরে তার নিকটাত্মীয়ের নামেও দেশটিতে ব্যবসা ও সম্পদ রয়েছে।
সিঙ্গাপুরেও তার নামে সম্পদ ও বিনিয়োগের তত্য পাওয়া গেচে। সেগুলোর বিসয়ে আরও বিশদ তদন্ত চলছে।
যুক্তরাজ্যে থাকা বেশ কিছু সম্পদ বদ্দ করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমীরাতেও ২২৮টি বাড়ি বা ফ্ল্যাট ও চারটি ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা তাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলো জব্দের বিষয়ে দেশটির সঙ্গে আলোচনা চলছে।
