.
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক নিয়ে দেশটির সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় তিন দিনব্যাপী আলোচনা শেষ হয়েছে শুক্রবার। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের সময় সকাল ৯টায় বৈঠক শুরু হয়। চলে দুপুর পর্যন্ত। নানা বিষয়ে দরকষাকষি হয়েছে। দিনব্যাপী বৈঠকেরর মধ্য অনেক বিষয়েই সমঝোতা হয়নি।
তবে যেসব ইস্যুতে মতপার্থক্য ছিলো তিনদিনের বৈঠকে সেসবের অধিকাংশ ক্ষেত্রে উভয়পক্ষ ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে। আর এতে দুই পক্ষই কিছু ছাড় দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে অন্য কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে বাংলাদেশকেও তা অনুসরণ করতে হবে এমন কিছু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক শর্তে একমত হতে পারেনি ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে কোন দেশকে নিষেধাজ্ঞা দিলে সেটি ঢােকাকেও কার্যকর করতে হবে।
তিন দিনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থেকে আরোপিত পাল্টা শুল্ক কমানোর বিষয়ে আশ্বাসও পাওয়া গেছে। এই বৈঠকের সুপারিশের ভিত্তিতে ট্রাম্প প্রশাসন চূড়ান্ত পাল্টা শুল্ক নির্ধারণ করবে। তবে শুল্ক একেবারে শূণ্যে নামবে না। কিছু শুল্ক বহাল থাকবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি বাড়াতে হবে। এতে দুই দেশের মদ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি কমবে। বর্তমানে দুই দেশের মদ্যকার বাণিজ্য বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে।
যেসব বিষয়ে ঐক্যমত্যে পোঁছানো সম্ভব হয়নি পরতর্তীতে সেগুলো নিয়ে তৃতীয় দফায় ভার্চুয়ালি বা সরাসরি দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে।
দ্বিতীয় দফার আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। সরাসরি আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাওসার চৌধুরী। ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে দ্বিতীয় দিনের আলোচনার বিষয়ে শুক্রবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, শুল্ক আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি কেমন হবে, সেসব বিষয় উপস্থাপন ও যুক্তিতর্ক হয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে দুই দেশ মোটামুটিভাবে একমত হয়েছে। কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। দ্বিতীয় দিনের আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন একান্তে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ অ্যাকম্বাসাডর জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গ্রিয়ার ট্রাম্প প্রশাসনে মন্ত্রী পদমর্যাদার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যেক্তি। তার সঙ্গে শুল্কবিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পাশাপাশি সে দেশ থেকে আমদানি বাড়াতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি এর মধ্যে শুরু হয়েছে। শুল্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যায্যতা প্রত্যাশা করে। পরিবেশ যেন বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতামূলক থাকে। গ্রিয়ার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর অন্যতম কারণ এ দেশে তৈরি বেশিরভাগ পণ্যে চীনা কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। তাই তিন দিনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র-চীনের শুল্কযুদ্ধের অংশ হিসেবে মার্কিন কর্মকর্তারা বাংলাদেশকে শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য চীনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
