নিজস্ব প্রতিবেদক
একটি সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগ আমলে দ্বিগুণ দামে রিং বিক্রি করে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা লুটেছে
হৃদরোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ করোনারি স্টেন্টবা হার্ট রিং নিয়ে মুনাফাখোরী ব্যবসার প্রসার বসিয়েছিল। হার্টের রিং এর দায় দ্বিগুনের বেশি রাখতো। আমদানিকারক ও কিছু চিকিৎসক মানবতাকে বিসর্জন দিয়ে মুনাফা লুটছিল। এতে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের রোগীরা বিপাকে পড়ছিল। তারা বেশি দামে হার্টের রিং কিনতে পারেনি বলে অনেকে অপারেশও করাতে পারেনি। সরকারের এক তদন্তে এ ঘটনা উদঘাটন হওয়ায় এখন এর দাম পুনঃনির্ধারণ করে দিয়েছে। এতে রিংয়ের দাম কমেছে ৩ হাজার টাকা থেকে ৮৮ হাজার টাকা পর্যন্ত।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ওষুধ প্রশাসন-১ শাখা থেকে সোমবার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞ পরামর্শক কমিটির সুপারিশ, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের যুক্তিসঙ্গত মুনাফা এবং ভ্যাট-শুল্ক ইত্যাদি বিবেচনায় তিনটি আন্তর্জাতিক কোম্পানির অ্যাবট, বোস্টন সায়েন্টিফিক এবং মেডট্রনিক-এর আমদানি করা স্টেন্টগুলোর দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন তালিকা অনুযায়ী, মেডট্রনিক কোম্পানির ‘রিজলিউট অনিক্স’ স্টেন্টের আগের দাম ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা, যা কমিয়ে ৯০ হাজার টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বোস্টন সায়েন্টিফিক কোম্পানির ‘প্রোমাস এলিট’ স্টেন্টটি আগে ৭৯ হাজার টাকায় বিক্রি হতো, এখন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার টাকা। একই কোম্পানির ‘প্রোমাস প্রিমিয়ার ’ স্টেন্টের দাম ৭৩ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৭০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
সিনার্জি সিরিজের তিনটি স্টেন্টের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে ‘সিনার্জি এক্সডি’ স্টেন্টে, যার আগের দাম ছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। নতুন দামে এটি এখন বিক্রি হবে ১ লাখ টাকায়। অন্যদিকে ‘সিনার্জি’ ও ‘সিনার্জি শিল্ড’ স্টেন্ট দুটির দাম কমিয়ে যথাক্রমে ৯০ হাজার টাকা করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
অ্যাবট কোম্পানির ‘জায়েন্স প্রাইম’ স্টেন্টের দাম ছিল ৬৬ হাজার ৬০০ টাকা, যার বর্তমান দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার। ‘জায়েন্স এক্সপেডিশন’ স্টেন্ট এটি আগের মতোই ৭১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হবে।
তবে ‘জায়েন্স আলপাইন’ এবং ‘জায়েন্স সিয়েরা’ স্টেন্ট দুটির দাম ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ এবং ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, যা কমিয়ে আনা হয়েছে ৯০ হাজার টাকায়।
এছাড়া মেডট্রনিক কোম্পানির আরেকটি স্টেন্ট ‘অনিক্স ট্রুকর’ আগে বিক্রি হতো ৭২ হাজার ৫০০ টাকায়। এখন সেটি পাওয়া যাবে ৫০ হাজার টাকায়।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, অনুমোদিত দাম সংক্রান্ত তালিকা হাসপাতালে দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে রাখা এবং তা ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। স্টেন্টের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ হিসেবে ৫ শতাংশের বেশি আদায় না করতে এবং নির্ধারিত দামের বাইরে কোনো কার্ডিওভাসকুলার বা নিউরো ইমপ্ল্যান্ট ডিভাইস কিনতে না দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
আগে এসব রিংয়ের নাম বেশি মাত্রায় রেখে রোগীদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল।
জানা গেছে, বিগত সরকারের সময়ে একটি চক্র এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো। ফলে অধিক চড়া দামে বিক্রি করতো। রোগীদের কোন বিকল্প ছিল না। ফলে বেশি দামেই কিনতে বাধ্য হতো।
প্রতিবেশি দেশ ভারতেও এসব রংয়ের দাম অনেক কম। অথচ বাংলাদেশে বেশি ছিল। সরকার কিছুই করতো না। বরং একটি সিন্ডিকেট সরকারি কর্মকর্তাদের বিশেষ উপরি দিতো। যে কারণে তারাও নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থেকে কিছুই করতো না।
বর্তমানে ডলারের দাম ও রূপীর দামের সঙ্গে সমন্বয় ভারতের প্রায় সমান দামে রিং বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
