নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট কমাতে ও লেনদেন স্বাভাবিক করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জুলাই মাসে রেকর্ড পরিমাণে বিশেষ তারল্য সহায়তা দিয়েছে। ওই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে সুদের হার ছিল ১০ থেকে ১২ শতাংশ। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে মোটা অংকের টাকা ধার দেওয়া হয়েছে। গত জুনে বিশেষ তারল্য সহায়তা বাবদ দেওয়া হয়েছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দেওয়া বিশেষ তারল্য সহায়তার মধ্যে গত জুলাইয়ে দেওয়া সহায়তাই সর্বোচ্চ।
সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতে সংঘঠিত লুটপাটের কারণে সৃষ্ট ক্ষত আরও প্রকট হচ্ছে। লুটের অর্থ এখন খেলাপি হচ্ছে। যে কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এখন ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান খারাপ হচ্ছে। এর বিপরীতে তারল্য সংকট বাড়ছে। তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো যেমন আমানতকারীদের টাকা ফেলৎ দিতে পারছে না, তেমনি গ্রাহকদের চাহিদা মত ঋণও বিতরণ করতে পারছে না। আগে বিতরণ করা খেলাপি হওয়ায় ও নতুন ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয়ও কমে যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিক লেনদেন করতে পারছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানামুখী উপকরণ ব্যবহার করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জরুরী প্রয়োজনে বিশেষ তারল্য সহায়তা দেয়। এক দিন থেকে এক বছর মেয়াদী এসব সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে স্বল্প মেয়াদী অনেক সুবিধার অর্থ ব্যাংকগুলো পরিশোধ করে দিয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সবচেয়ে বেশি তারর্য সুবিদা দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রোপোর মাধ্যমে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর আগে কেনা ট্রেজারি বিল রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে জুলঅই মাসেই সর্বোচ্চ টাকা দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। জুনে দেওয়া হয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, মে মাসে দেওয়া হয়েছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রতি মাসে এক লাখ টাকার কম করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হয়েছে কলমানি মার্কেট থেকে। এ মার্কেট থেকে জুলাইয়ে ব্যাংকগুলো এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে মোট সহায়তা নিয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। গত জুনে নিয়েছে ৮৯ হাজার কোটি টাকা, মে মাসে নিয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক লাখ কোটি টাকার বেশি দার নেওয়া হয়েছে। বাকি সময়ে ধারের পরিমাণ প্রতি মাসে ১ লাখ কোটি টাকার কম ছিল।
আন্ত:ব্যাংক রেপোর মাধ্যমেও এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার করছে। কিন্তু এ খাতে লেনদেন করেবারেই কম হচ্ছে। গত জুলাইয়ে এ খাতে লেনদেন হয়েছে ৩০ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। জুনে আন্ত:ব্যাংক রেপোতে লেনদেন হয়েছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। গত জানুয়ারিতে এ খাতে সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাচ্ছে তারল্য ব্যবস্থায় সমতা আনার জন্য ব্যাংকগুলেঅ আন্ত:ব্যাংক ব্যবস্তাপনায় জোর দিক। কিন্তু ব্যাংকগুলোর আস্থাহীনতা (বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রতি সবল ব্যাংকগুলোর) এমনভাবে বেড়েছে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে নিয়ে পরিশোধ করতে পারছে না। এ খাতে দেওয়া ধারও খেলাপি হচ্ছ্ েইতিমধ্যে এক্সিম ব্যাংক ব্যাংক এশিয়া থেকে ধার নিয়ে খেলাপি হয়ে পড়েছে। এটি নিয়ে মামলাও হয়েছে। আরও কিচু ব্যাংকের ধার দেনা পরিশোধের ব্যর্থতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ করতে হচ্চে।
